মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারের জন্য চাকরিতে কোটা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি সবাইকে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত ভূমিসেবা সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন। নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় ও প্রতিক্রিয়া বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে আমাদের এদেশ দিয়ে গেছেন। সেটার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের যারা পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের সন্তানদের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক কোটার যে বিষয়টি ছিল সেটা যথাযথ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অমনোযোগিতা ও অমান্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা এসেছিল। আমরা সকলকে অনুরোধ জানাবো, উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন। যেহেতু আদালতের রায় এখনো সুনির্দিষ্টভাবে আমার হাতে আসেনি বা পড়ে দেখতে পারেনি; তাই সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মন্তব্য আমি করছি না। তবে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে মুক্তিযুদ্ধের এত সময় পরে এসেও তাদের সন্তানদের জন্য রাখা কোটা প্রশ্নে কিছু মানুষের এত উষ্মা, তা খুবই দুঃখজনক। দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়েছেন, তাদের সন্তানদের নিয়ে তারা যদি দ্বিতীয়বার প্রশ্নবিদ্ধ হন তাহলে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, এটা আমাদের পীড়া দেয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের সত্তরের নির্বাচনে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার পক্ষে ২০ শতাংশ ভোট যায়নি। সেই ২০ শতাংশ হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী যে অংশটি ছিল, তারা কিন্তু পরবর্তীতে দীর্ঘ ২৬-২৭ বছর ধরে সরকারের আনুকূল্য পেয়ে ফুলেফেঁপে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে। সুতরাং সেই গোষ্ঠীগুলো যে বেড়ে অনেক বড় হয়নি, সে কথা তো বলা যেতে পারে না। তারা রাজনীতি ও সমাজে বিদ্যমান এবং অর্থনীতিতে খুব শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিটা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা চেতনার বিরোধিতা করবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের পাকিস্তান নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে নওফেল বলেন, এখনো কিছু রাজনৈতিক দল বলছে যে, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, পাকিস্তানের সময় নাকি ভালো ছিল। তো কতটুকু পাকিস্তানপ্রেম দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সেই দলে মহাসচিবের মধ্যে থাকতে পারে সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি। সেটা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি স্বাধীনতার এতদিন পরে এসেও এরকম আছে কিনা আমি জানি না। তারা কিন্তু বহাল তবিয়তে আছেন। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় কুচক্রিরা তাদেরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে তারা রয়ে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম। তারাই কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধর্মনিরপেক্ষ সম্প্রদায়িক চেতনা বিচ্যুত করে সেটাকে এক ধরনের সম্প্রদায়িককরণে প্রচেষ্টা তারাও করে। নতুন পাঠ্যসূচিতে সব ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় বলে এসেছি, শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রক্রিয়া, পাঠদান ব্যবস্থা ও পাঠক্রমের মধ্যে সবসময় সকল ধর্মের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গাটাতে আমরা সবসময় শক্তিশালী ভূমিকায় থাকবো। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কাজ জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কখনো করেনি, আগামীতেও করবে না। কিছু কিছু বিষয় তারা বিতর্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন, সেগুলো আমরা দেখছি এবং এ ধরনের কিছু থাকলে অবশ্যই আমরা নিরসন করব। গতকাল শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ রাখার বিষয় ঈদুল আযহার পর থেকে বিবেচনা করা হচ্ছেও জানান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে উষ্মা দুঃখজনক : শিক্ষামন্ত্রী
- আপলোড সময় : ০৯-০৬-২০২৪ ১০:১৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৬-২০২৪ ১০:১৭:৩৩ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ